নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলানিউজলাইন ডটকম:12:12:43 AM12/26/2020
![]() |
প্রথম ধাপের নেত্রকোণার মদন পৌরসভার নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর। এরই মাঝে সময় ঘনিয়ে আসায় তুঙ্গে উঠেছে প্রচার প্রচারণা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণার মাঝে গাছে গাছে ঝুলছে পোস্টার, মাইকে চলছে প্রচারণা, হাতে হাতে চলছে প্রচারপত্র বিলি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পৌর সভার জাহাঙ্গীরপুর, মদন, দেওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
এবারের মদন পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্র্রার্থী থাকায় বিএনপি রয়েছে বেকায়দায়। আর এর পুরো ফায়দা ঘরে তুলতে একক প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগ চেষ্টা চালাচ্ছে।
মদন উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, মদন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে এবার ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাউন্সিলর পদে মোট ৪০ জন প্রার্থীর মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনে ১৪ জন ও বাকিগুলোতে ২৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।এর মধ্যে ৩,৪,ও ৫ নামার ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনে তৃতীয় লিঙ্গের সেজুতি তালুকদার সোনালী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। জেলায় তিনিই প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের একজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক। বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী এনামুল হক। তিনি জেলা যুবদলের সদস্য। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন। তিনি জগ প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাশফিকুর রহমান। তিনি গত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ পেয়ে পরাজিত হন। এবার মোবাইল ফোন প্রতীকে লড়ছেন। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ক্ষুদিরাম দাস। আর ওলামা ঐক্য পরিষদের অপর প্রার্থী মো. আবদুর রউফ নারিকেল গাছ প্রতীকে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এবার নির্বাচনটি ইভিএম পদ্ধতিতে হচ্ছে। এ নিয়ে প্রার্থীসহ ভোটারদের মধ্যে রয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা। অনেকের ধারণা এক প্রতীকে ভোট দিলে ভোট চলে যাবে অন্য প্রতীকে। তবে সময়ের সাথে সাথে ইভিএম নিয়ে প্রচার প্রচারণায় এরকম ভূল ধারণা পরিবর্তণ হচ্ছে। নতুন ভোটারের মধ্যে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কাছে দলীয় প্রতীক খুব একটা বিবেচ্য বিষয় নয়। তারা চান প্রার্থীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও দায়িত্বশীলতা।
দলীয় প্রতীক দেখে নয়, প্রার্থীর যোগ্যতা দেখেই ভোট দেবেন ভোটারদের এমন মনোভাব বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তারা বলছেন এটা স্থানীয় নির্বাচন। এখানের প্রতিনিধিরা নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করবেন । তাই তাদের যোগ্যতাই বেশি বিবেচনা করব বলছেন অনেক ভোটার।
যোগ্যতার মাপকাঠি কি এমন প্রশ্নে ভোটারদের জবাব, সৎ প্রার্থী, যিনি অবহেলিত এই পৌর সভাটির রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়ক বাতি, পয়নিষ্কাশন, পানি সরবরাহ, বজ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, যানজট নিরসন, মাদকদ্রব্য নিরসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে নাগরিক সুবিধা দিতে পারবেন তিনিই আমাদের কাছে যোগ্য।
মদন পৌর সভার জাহাঙ্গীরপুর এলাকার ভোটার শামীম আল বশীর, মো: জাকারিয়া।- এরা দুইজনই এবার নতুন ভোটার ও শিক্ষার্থী। পৌর ভোট নিয়ে অভিব্যক্তি কি জানতে চাইলে শামীম আল বশীর বলেন , ‘যিনি তরুণদের কথা ভাববেন, সমাজের মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল হবেন এমন মেয়র প্রার্থী তার পছন্দের।’ মো: জাকারিয়া বলেন, দেশ অনেক এগিয়েছে , তুলনায় আমাদের পৌরসভাটি অনেক পিছিয়ে। উন্নয়ন যার হাত ধরে এগুতে পারে তার এমন প্রার্থী পছন্দের। তারা দুই জনেই জানান, প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণার দিকে খেয়াল রাখছেন। তারা কি ধরণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এসব বিষয় বিশ্লেষন করেই তারা তাদের ভোট কাকে দেবেন তা ঠিক করবেন।
একই এলাকার নারী ভোটার শেফা আক্তার, দোলেনা আক্তার ও আরজু বেগম।
শেফা আক্তার বলেন, মদন পৌরসভাটি খুবই অনুন্নত। তেমন কোন সেবা নেই। এবার উন্নয়নে জোর দেব আমরা। প্রার্থীদের নির্বাচনের পরে অনেককে আর এলাকায় দেখা যায় না। যিনি আমাদের পাশে থাকবেন তাকে ভোট দেব আমরা।
মামুদপুর এলাকার ভোটার নিজাম উদ্দিন, মেরাজ উদ্দিন ,শহীদ মিয়া , মাজু মিয়া। মধ্য বয়সী মানুষ তারা। একটি চায়ের দোকানে তাদের সাথে নির্বাচন নিয়ে কথা বললে তাদের একসাথে জবাব ‘দলীয়ভাবে প্রতীকে নির্বাচন হলেও দল বা প্রতীক আমাদের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। যে প্রার্থীর ব্যক্তি হিসেবে মানুষ ভাল, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। যিনি আমাদের ডিজিটাল সেবা দিতে সক্ষম, আমরা তাকেই ভোট দেব। শহীদ মিয়া বলেন, এবার করোনার মাঝে আমরা ানেক জনপ্রতিনিধিদের ভাল করে চিনেছি। এরকম বিপর্যয়ের মাঝেও মানুষের পাশে থেকে যারা কাজ করেছেন তাদেরকেই আমরা বেছে নেব। তাছাড়া এখনতো ডিজিটাল সেবা ছাড়া গতি নাই। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিতেও প্রার্থীদের যোগ্যতা আমাদের বিবেচনার মধ্যে রয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, আশা করছি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। পৌরসভার উন্নয়নের জন্যে ভোটারেরা আমাকেই বেঁছে নেবেন। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে ধানের শীষের প্রার্থী এনামুল হক বলেন, নির্বাচন সঠিকভাবে হবে কি না তা দেখার বিষয়। নির্বিঘ্নে ভোটারেরা ভোট দিতে পারলে আমি জয়ী হবো। মদন বিএনপির ঘাঁটি। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের ওপর। যদি ভোট ডাকাতি হয় তবে আমার সাথে ভোটারেরাও হেরে যাবেন।
নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদি বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাশফিকুর রহমানও। তিনি বলেন, এই পৌর নির্বাচনের জন্যে বছরের পর বছর ধরে এখানের মানুষের মধ্যে কাজ করেছি। ভোটারেরা সব সময় আমাকে পাশে পেয়েছেন। তারা আমাকেই ভোট দেবেন। আমিই জয়ী হবো।
বরাবরই শক্ত প্রার্থী এই পৌরভোটে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকা সাবেক মেয়র দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতটুকু এই পৌর শহরের উন্নয়ন হয়েছে তা আমার সময়েই । ভোটারেরা সব জানেন। সব দেখেছেন। এবার তারা আমাকেই ভোট দেবেন । প্রচারণায় যে সাড়া পেয়েছি তাতে আমি জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদি। তবে নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণ হয় যোগ করেন তিনি।
এই প্রথমবারের মতো সংরক্ষিত আসনে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী হয়ে সবার নজর কেড়েছেন সেজুতি তালুকদার সোনালী। তিনি বলেন, আমরাও যে সমাজের মূলস্রোতের মানুষ। আমরাও যে জনসেবা থেকে শুরু করে সবকিছুই পারি তা প্রমাণ করার সূযোগ চেয়েছি ভোটারদের কাছে। সম্মানিত ভোটারেরা আমাকে নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন। তাদের মনোভাব ও সাড়া দেখে আমি অভিভূত। আমি আশা করছি বিপূলভোটে জয়ী হবো।
মদন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ‘মদনে ১২ হাজার ৮৪১ জন ভোটার রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ হাজার ৩২৪ জন পুরুষ ও ৬ হাজার ৫১৭ জন নারী ভোটার রয়েছেন। ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতিতে কিভাবে ভোট দিতে হয় আগামী ২৬ ডিসেম্বর এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এখন নাগাদ নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আশা করছি কোন ধরণের গোলযোগ ছাড়াই উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই নির্বাচন শেষ হবে। তাছাড়া শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে। প্রয়োজনীয় আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য কাজ করবে।
বাংলানিউজ লাইন.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।